মাইক্রোপ্লাস্টিক, সিগারেট এবং আমাদের দায়

মুনতাসির মামুন

29 August 2022, 06:29 PM
Updated : 29 August 2022, 06:29 PM

সিগারেটের ফিল্টার যেহেতু তৈরি হয় সেলুলজ এসিটেটে যা প্রাকৃতিক ভাবে পচনশীল বলা হলেও তার জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট অনুঘটকের। বিষয়টি ঠিক কলার ছোলকা নয় যে ফেলে দিলাম তো মাটিতে মিশে গেল আপনা থেকেই।


মাইক্রোপ্লাস্টিকের সাথে আমাদের পরিচয় নতুন হলেও একেবারে প্রথম নয়। প্লাস্টিকের আকার যখন ছোট হতে হতে অতি ক্ষুদ্র হয়ে যায়, তখন তাকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলা হয় (এক ইঞ্চির ১৬ ভাগের ৩ ভাগ বা তারও কম)। নাম থেকেই ধারণা হতে পারে বস্তুটি ছোটই হবে। বাস্তবতাও তাই। যে পরিমিতি ধরা হয়েছে তা যেকোনো মাইক্রোপ্লাস্টিকের সর্বোচ্চ সম্ভাব্য আকার। এর থেকে বড় হলে তাকে আর মাইক্রোপ্লাস্টিক না বলে বলা হয় মেসোপ্লাস্টিক। যার আকার সীমা ৫ থেকে ১০ সেন্টিমিটার বা এক ইঞ্চির ১৬ ভাগের তিন থেকে ছয় ভাগের মধ্যে থাকে। এই নাম বা আকারের সঙ্গে পরিচিতি পুরো ব্যাপারটা বুঝতে সাহায্য করবে।

বর্তমান সময়কে প্লাস্টিক সিভিলাইজেশন বা প্লাস্টিক সভ্যতা বলা হয়। বাড়িয়ে বলা নয় যে একেবারেই। আমরা রোজকার জীবনে হেন কোনো দিন বা ঘন্টা পার করতে পারব না যখন কোনো না কোনো প্লাস্টিকের তৈরি পণ্যের সঙ্গে আমাদের সংস্পর্শ হবে না। সে চেতন, অবচেতন, প্রয়োজন, অপ্রয়োজন– যে ভাবেই হোক। প্লাস্টিক থাকবেই। এখন ব্যাপার হলো, আমরা কতগুলোকে প্লাস্টিক হিসেবে জানছি আর কতগুলোকে ভাবছি প্লাস্টিক নয়। আমাদের ধারণাতেই আসবে না– এটা কি করে প্লাস্টিক হতে পারে!

আজ আমরা যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব, তাকে প্লাস্টিক হিসেবে কতজন ধারণা করতে পেরেছেন সেই প্রশ্ন রাখাই যায়।

সিগারেট। মানব সভ্যতার সাথে মিলেমিশে থাকা এই অভ্যাসের নাম অজানা নয় কারও। সিগারেট, ধূমপান বা যে যেমন নামেই ডাকা হোক, এটা আমাদের (ইচ্ছা বা অনিচ্ছায়) জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে। আমরা সিগারেট এবং তার স্বাস্থ্যগত দিকে এগোবো না। এই বিষয়ে আমাদের জানার পরিমাণ কিছুটা হলেও বেশি। সিগারেট ক্ষতিকারক সেটা অবধারিত সত্য। ওই সত্য জেনেই সবাই (যারা সিগারেট খান বা ধূমপান করেন) কাজটি করেন। তার দায়-দায়িত্ব সব আমাদের, ধূমপায়ীদের। এই ক্ষতি বা স্বাস্থ্যঝুঁকি ব্যক্তি পর্যায়ে হলেও সিগারেটের পরিবেশগত ক্ষতি পৃথিবীর জন্য মারাত্মক। এর প্রকটতা কতটা বেশি তা নিয়েই এই কথাগুলো বলা। এটাও বলে রাখা ভালো, সিগারেটের পরিবেশগত দিক নিয়ে জোর দেওয়া মানে এর স্বাস্থ্যগত দিকটাকে অবহেলা বা অবজ্ঞা করা হচ্ছে– ঘটনা আদতে এমন নয়।

বর্তমানে বাজারে যে সিগারেট পাওয়া যায় তাতে আমরা তিনটি অংশ খালি চোখেই দেখতে পাই। ফিল্টার, তামাক বা টোব্যাকো আর এই দুই অংশকে একসাথে করে রাখে এক ধরনের কাগজের মোড়ক। তামাকের ব্যবহার ঠিক কবে থেকে শুরু সেই দিনক্ষণ বের করা কঠিন। ধারণা করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৬০০০ সালে আদিবাসী আমেরিকানরা সর্বপ্রথম তামাকজাতীয় গাছের আবাদ শুরু করে [১]। প্রথম দিকে তামাকের সেবন বা ব্যবহার আজকের মতো ছিল না। সিগারেট শলাকার সাথে ফিল্টারের সংযুক্তি ঘটে ১৯৫০ সালে এসে [২]। তার আগে শলাকাকৃতির সিগারেটে কোনো ফিল্টার ছিল না। তামাক সেবন আরও আগে থেকে হয়ে আসলেও সিগারেটের জনপ্রিয়তা ঘটে প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। সৈনিকদের নিত্যদিনকার খাবারের তালিকায় সিগারেট যুক্ত করা হয় ওই সময় থেকেই [১]। তাই ধারণা করা হয় এই দুই বিশ্ব যুদ্ধের পরে এক বিশাল সংখ্যক সিগারেটে আসক্ত সৈনিক তথা জনগোষ্ঠী তৈরি হয়। ধীরে ধীরে ওই সংখ্যা বাড়তে থাকে। এই সময় পর্যন্তও সিংহভাগ সিগারেটে ফিল্টার ছিল না। এমনকি ফিল্টারবিহীন সিগারেট (বিড়ি নয়) আমরা কয়েক বছর আগেও দেখেছি বাংলাদেশে। সিগারেট ক্ষতিকর এই সত্যটা আরও পোক্ত হয় উনিশ শতকের শুরুর দিকে। ফুসফুসে ক্যানসারের কারণ হিসেবে সিগারেটের [৩] অবদান আছে বলে গণ্য করা হয়। এই বিষয়ে নানান মতবাদ আছে। আছে অনেক ব্যাখ্যা। এতসব বলার কারণ, সিগারেটে ফিল্টার সংযুক্তির কারণটা যেন ধরতে পারা যায়।

ফিল্টারের আভিধানিক বাংলা ছাঁকনি। যা দিয়ে কোনো কিছু শুদ্ধতর করা যায় বা হয়। সিগারেট খাওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যজনিত ঝুঁকি কমানোর জন্য কী করা যায়, সেই অনুধাবন থেকে সিগারেট শলাকার সাথে এমন এক ধরনের ছাঁকুনি যুক্ত করা হয় এই ভেবে যে এতে আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কিছুটা হলেও কমবে (আসলে কী হয় তা আমার জানা নেই)। তবে সিগারেটে তামাক বা টার-এর পরিমাণ কমানোর একটা প্রচেষ্টাও বলা যায়। মোদ্দা কথা হলো, কিছুটা নিরাপদ সিগারেট তৈরি করা। এই কিছুটা নিরাপদ সিগারেট তৈরি করার জন্য টোব্যাকো/সিগারেট কোম্পানিগুলো প্রথম দিকে তুলা, চারকোল/কয়লা, খাবারের স্টার্চসহ বিভিন্ন ধরনের পদার্থ/ম্যাটেরিয়াল ব্যবহারের চেষ্টা চালালেও শেষতক সেলুলজ এসিটেট নামক প্লাস্টিকে তৈরি তন্তু বা সুতাকেই (ফাইবার) বেছে নেয়। আর আজ অবধি এর ব্যত্যয় ঘটেনি। সরল করে বললে সিগারেট ফিল্টার তৈরি হয়ে থাকে সেলুলজ এসিটেটে তৈরি একধরনের কাপড় থেকে। আর আমাদের মধ্যে একটা ভ্রান্ত ধারণা চাপিয়ে দেওয়া হয় যে এই ফিল্টারগুলো বায়োডিগ্রেডেবল। পরিবেশের সাথে মিশে যেতে পারে বা যাবে। যা কিছুটা অসত্য আর কিছুটা অর্ধসত্য।

এই এসিটেট কী?

এসিটেট মানুষের তৈরি সেমি-সিন্থেটিক ম্যাটেরিয়াল। মাথায় রাখা ভালো, এর উদ্ভাবন নিজেদের প্রয়োজনে। এটি প্রস্তুত করা হয় কাঠ থেকে (কাঠের পাল্প থেকে। যেমন কাগজ তৈরি হয় কাঠের পাল্প থেকে। পাল্প হলো মণ্ড বা শক্ত আর তরলের মাঝের অবস্থা অনেকটা)। এই কাঠের মণ্ডের সাথে এসিটিক এসিড, এসিটিক অ্যানহাইড্রেড আর সালফিউরিক এসিড যুক্ত করা হয়। তার মানে এই নয় যে কেবল একটা উপাদানেই এসিটেট তৈরি করা হয়। এর সাথে আরো যৌগ বা মৌল বা চাহিদার প্রয়োজনে অন্যান্য উপাদান যুক্ত করা হয়। অর্থাৎ, পূর্ণাঙ্গভাবে প্রাকৃতিক নয়। যদিওবা আমাদের গ্রিনওয়াশ করা হয় এই বলে যে, ফিল্টার কাঠের মণ্ড বা কাঠ থেকে তৈরি। কিন্তু পূর্ণসত্য নয় [৪]। উনিশ শতকে উড়োজাহাজের ভারনিস হিসেবে ইউরোপে এর ব্যবহার শুরু হলেও, বিশ শতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাপড় হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। এই এসিটেট, মানব নির্মিত দ্বিতীয় কাপড়। এর আগে রেয়ন প্রস্তুত করা হয়েছিল সভ্যতার প্রয়োজনে।

সিগারেটের ফিল্টার যেহেতু তৈরি হয় এই সেলুলজ এসিটেটে যা প্রাকৃতিক ভাবে পচনশীল বলা হলেও তার জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট অনুঘটকের। বিষয়টি ঠিক কলার ছোলকা নয় যে ফেলে দিলাম তো মাটিতে মিশে গেল আপনা থেকেই। ধূমপান শেষে আপনার-আমার ফেলে দেওয়া এই ফিল্টার বর্তমান দুনিয়াতে সবথেকে বেশি পাওয়া বর্জ্যগুলোর একটি। ধূমপায়ীরা প্রতিবছর প্রায় ৬.৫ ট্রিলিয়ন (৬.৫ লাখ কোটি) এবং সে অনুপাতে প্রায় ১৮ বিলিয়ন (১৮০০ কোটি) সিগারেট শলাকা প্রতিদিন ক্রয় করেন [৫]।

সমস্যাটা এখানেই। সংখ্যায়। আমরা কখনও কি ভেবে দেখেছি এই বিশাল সংখ্যক সিগারেটের ফিল্টার বা সিগারেটের উচ্ছিষ্টাংশ শেষ পর্যন্ত কোথায় যায়? শেষ টান দিয়ে ফেলে দেবার পর তার অন্তিম গন্তব্য কোথায়? আকারে যেহেতু ছোট আর সবার জন্য কোনো নির্দিষ্ট স্থানে ফেলাটাও সম্ভবপর হয় না। তাই যত্রতত্র ফেলাটা অতিসাধারণ ঘটনা বলেই ধরা হয়। পৃথিবীর কিছু কিছু দেশ বা স্থান এর বাইরে থাকতে পারে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে যেখানে সেখানে ফেলাই দস্তুর। অলিখিত নিয়ম। আমাদের এই স্বভাবগত অভ্যাসের একটা নামও দেয়া হয়েছে। একে বলে Anthropogenic litter [৬] এত দিন ব্যপারটা দৃষ্টির অগোচরে থাকলেও বর্তমানে সিগারেট ফিল্টারের এই পরিবেশগত দিকটা ভীষণভাবে বিবেচিত হচ্ছে। প্লাস্টিক জাতীয় বা প্লাস্টিকে তৈরি যেসব বর্জ্য আমরা ফেলি, তারমধ্যে কতকগুলোর সারকুলার ইকোনমিক ভ্যালু বা চক্র বিক্রয়যোগ্যতা থাকে বলে সেগুলো সংগ্রহ, বিক্রি এবং পুনর্ব্যবহার করা অপেক্ষাকৃতভাবে সহজ হয়। কিন্তু ক্ষুদ্র ধরনের কোনো প্লাস্টিক বর্জ্য যেমন ছোট মিনিপ্যাক, লজেন্সের মোড়ক, সিগারেটের ফিল্টার– এ ধরনের বর্জ্যের সংগ্রহ কিংবা পুনর্ব্যবহার যোগ্যতা একেবারে শূন্যের কোঠায়। এত এত ফিল্টারের শেষ সমাধি হয়ে দাঁড়ায়, আমাদের যেকোনো জলাধার– নদী, খাল, বিল, সমুদ্র। এই পরিমাণটা কত বিশাল তার জন্য কিছু তথ্যই যথেষ্ট।

২০২০ সালে ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিনআপের এক দিনে প্রায় ১০ লাখ সিগারেট ফিল্টার সংগৃহীত হয়েছিল। তাও শুধু সমুদ্র উপকূল থেকে যেখানে জন সমাগম হয় [৭]। এই কাজের সাথে সুদীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সম্পৃক্ততার কারণে বাংলাদেশের অবস্থানটা কোথায়, তাও তথ্যের মাধ্যমে তুলে ধরা সম্ভব। ২০২১ সালে আমাদের সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেটির দুই পাশের উপকূল থেকে ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিনআপে একদিনে ১১,৭৮০টি সিগারেটের ফিল্টার কুড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল। সংখ্যাটা অন্য যেকোনো ধরনের বর্জ্যের কয়েকগুণ বেশি। ফিল্টারের সবথেকে বড় সমস্যা এর আকার। মাটিতে, পানিতে কিংবা বালিতে যেখানেই পড়ুক, তা মিশে যেতে সময় নেয়। তাও ঠিক মিশে যায় না। প্রথমে কাগজের মোড়ক খসে যায় তার পর ফিল্টারের তন্তু বা ফাইবারগুলো ভাঙ্গতে থাকে। অন্যত্র যদি কোনো স্থির জলাধারে পড়ে, দ্রুত পানিতে তলিয়ে যাবে। কারণ তাপে, বায়ুর তোড়ে এর আকারে পরিবর্তন আসার আগে এর ভেসে থাকার ক্ষমতা কমে যায়। তৎসত্ত্বেও যতদিন বা যতক্ষণ এই উপাদান ভেসে থাকবে তত বেশি পরিমাণ মাইক্রো এবং মেসোপ্লাস্টিক তৈরি হবে [৮]। প্লাস্টিকের কোনো আকারই মঙ্গলজনক নয় তবে আকৃতি যত ছোট, ভয়াবহতাও তত বেশি। ফিল্টারের তন্তুগুলো প্রাথমিকভাবে ছোট হয়ে ভাসমান অবস্থায় থাকে যা পর্যায়ক্রমে জলজ প্রাণি, উদ্ভিদ সর্বোপরি জলজগতের সাথে মিশে যায় বা যাবে। প্লাস্টিক বাহিত হতে থাকবে। বর্তমানে সামুদ্রিক আবর্জনার (মেরিন ডেবরি) মধ্যে এই সিগারেট ফিল্টার অন্যতম প্রধান। তার কারণ, রিসাইক্লিং নিয়ে আগের থেকে আমাদের চিন্তাভাবনা বা কর্মতৎপরতা বাড়লেও বিক্রি হওয়া মোট সিগারেট ফিল্টারের প্রায় ৭৫% এখনও এর আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি [৯]। বাকি যে ২৫% ভাগের কথা বলা হচ্ছে, তারও পুর্নব্যবহার সম্ভবপর হয়নি। আমাদের দেশের দিকে তাকালে দেখা যায় বছরে জনপ্রতি প্রায় ৭৪৪টি সিগারেট আমরা খাই (ধূমপান করি)। এই ধূমপায়ীদের বয়স ১৫ বছরের ওপরে। সংখ্যার দিক থেকে সিঙ্গাপুরের জনপ্রতি সিগারেট খাওয়ার পরিমাণ আমাদের থেকে বেশি। এতে খুশি হবার কিছু নেই। জনসংখ্যার তুলনা করা হলে আমাদের মোট সিগারেটের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি হবে [১০]। এই যে পরিমাণের কথা আসছে, আমরা কোনোদিন কি শুনেছি সিগারেটের ফিল্টার নিয়ে কেউ কথা বলেছেন? বা সিগারেট ফিল্টার রিসাইক্লিং করা হচ্ছে? (যদি হয়ে থাকে তাহলে খুব ভাল। হলে পরিমাণটাও জরুরী। আমার জানা নেই।) এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য সত্য নয়। সারা পৃথিবীর জন্য সত্য। কাজ হচ্ছে, অনেকে কাজ করছেন, কিন্তু ফলাফল দেখতে দেখতে পরিবেশে ফেলে দেওয়া এই মারাত্মক বর্জ্যের পরিধি আজ এতটাই বেশি যে এর থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে ফিল্টারের ওপর নিষেধাজ্ঞার কথাও ভাবা হচ্ছে [১১]

এতক্ষণ বলা হলো শুধু এর পদার্থগত কুফল নিয়ে। সিগারেটের সাথে যে ভারি ধাতু (হেভি মেটাল) থাকে, তাও মাইক্রোপ্লাস্টিক তৈরি করে। সেদিকে এগোনো হলে সংখ্যার যে আকার ধারণ করবে তা আমাদের জন্য নেওয়া কঠিন হয়ে যাবে বা যেতে পারে। এই কার্যকারণ যে মনুষ্যসৃষ্ট।

কী করা যায়?

দেখুন সিগারেট আজকের নয়। ভোগ্যতালিকায় সিগারেটের স্থান অনেক আগে থেকেই। তাকে তামাক হিসেবে আমরা কয়েক হাজার বছর ব্যবহার করে আসলেও শেষতক সিগারেটও সেই তামাকই। তাই হুট করে আমি কেন, কেউ বলতে পারবে না, কী করা যায়। এটা লজ্জার। এ লজ্জা আমাদের নিজেদের। এ লজ্জার কারিগরও আমরা নিজেরাই। কিছু কাজ আমরা করতে পারি– যেখানে, সেখানে ফিল্টার না ফেলা তার মধ্যে অন্যতম প্রধান। ব্যক্তি হিসেবে, পৃথিবীবাসী হিসেবে পৃথিবীর উপকার হয় এমন একটা সোজা কাজ হলো আর্বজনা তৈরি না করা। ভোগবাদীতা থেকে দূরে থাকা। তা হয়তো সম্ভব নয় (যিনি পারবেন বা পারেন তাকে সালাম)। কিন্তু এই সহজ কাজটুকু করার জন্য বিজ্ঞানের দ্বারস্থ হতে হয় না। বিশ্বাসের জায়গায় নিয়ে আসতে আমরাই পারি। বোধহয় বিশ্বাস করার সময় চলে এসেছে যে, আমরা, মানবজাতি নিজেদের প্রয়োজনে যা কিছু তৈরি করেছি তার বেশির ভাগই পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে না। পরিবেশ তাই সেই মানব-তৈরি বস্তুগুলো নিজেও ধারণ করে না। আমাদের দিকেই ফিরে আসে, আসছে কিংবা ভয়াবহভাবে আসবে– প্রত্যাঘাতের মতো। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।

এই কাজে আপনার অংশীদারত্ব সবথেকে জরুরী কেননা আমাদের সবার কাজ শুধু কোনো প্রতিষ্ঠান, সরকার বা মুষ্টিমেয় কিছু পরিচ্ছন্নতা কর্মীর একার পক্ষে করা সম্ভব না। যদি মনে করেন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তবে দয়া করে যেখানে সেখানে সিগারেট বর্জ্য ফেলা থেকে বিরত থাকুন।

সরকার বা তামাক কোম্পানির দায়ভার আছে। কিন্তু আমাদের মতো আমের কথায় কিচ্ছু হবে না। তাই নিজের মতো করে এর সমাধান করা ছাড়া আর কিছু করার নেই। সবটাই আমাদের বিবেচনা।

[1] https://tobaccofreelife.org/tobacco/tobacco-history/
[2] https://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK179276/pdf/Bookshelf_NBK179276.pdf

[3] https://www.scielosp.org/article/bwho/2005.v83n10/799-800/
[4] Material Guide: What Is Acetate, and Is It Eco-Friendly?
[5] https://www.nationalgeographic.com/environment/article/cigarettes-story-of-plastic
[6] https://www.sciencedirect.com/science/article/abs/pii/S0013935119300787
[7] https://oceanconservancy.org/wp-content/uploads/2021/09/2020-ICC-Report_Web_FINAL-0909.pdf
[8] Occurrence, characterization, partition, and toxicity of cigarette butts ina highly urbanized coastal area. Christiane Freire Lima, Mariana Amaral dos Santos Pinto, Rodrigo Brasil Choueri, Lucas Buruaem Moreira, Ítalo Braga Castro, Instituto do Mar, Universidade Federal de São Paulo, Santos, Brazil
[9] https://www.sciencedirect.com/science/article/abs/pii/S0269749119364693
[10] https://en.wikipedia.org/wiki/Tobacco_consumption_by_country
[11] https://www.nationalgeographic.com/environment/article/cigarettes-story-of-plastic

Leave a Reply