মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং আমাদের দায়

মুনতাসির মামুন
Published :
2 August 2022, 08:09 PM
Updated : 2 August 2022, 08:27 PM
On bdnews24.com

প্রতি বছর প্রায় ৩৮০০ টন মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবেশের সাথে মিশে যায়, আর এটা আসে শুধু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত প্রসাধন সামগ্রীর মাধ্যমে। এই পরিসংখ্যান কেবল ইউরোপ মহাদেশের।


মাইক্রোপ্লাস্টিক শব্দটার সাথে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে হয় না। গেল দশকে সারা দুনিয়ায় বহুল চর্চিত শব্দগুলোর অন্যতম হলো মাইক্রোপ্লাস্টিক। মাত্র ২০০৪ সাল থেকে ইংল্যান্ডের প্লাইমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন বায়োলজিস্ট, প্রফেসর রিচার্ড থমসনের দেওয়া এই নাম এত অল্প সময়ে এভাবে পরিচিতি পাওয়াটা এর আক্ষরিক গুরত্বকে আরও ত্বরান্বিত করে। তাই শোনা হলেও আসলে মাইক্রোপ্লাস্টিক কি সেটার জন্য বিষদ বিবরণে না গিয়ে অল্প কথায় বলা যায়– যে প্লাস্টিকের দৈহিক আকার ৫ মিলিমিটার থেকে কম, তাই মাইক্রোপ্লাস্টিক। আমরা যেহেতু ইঞ্চির হিসেবের সাথে অভ্যস্ত, ওই হিসেবে ৫ মিলিমিটার হলো এক ইঞ্চিকে যদি ১৬ ভাগ করা হয়, সেই ১৬ ভাগের মাত্র ৩ ভাগ (ন্যাশনাল ওশিয়ানিক অ্যান্ড অ্যাটমোফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ইউএসএ এবং ইউরোপিয়ান কেমিক্যাল এজেন্সি-এর মানদণ্ড অনুযায়ী)। এর অর্থ হলো এটা ছোট, বেশ ছোট। মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাপ ৫ মিলিমিটারের থেকে যেহেতু আরও ছোট হতে পারে বা হয়, এটা হতে পারে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র, অণুবীক্ষণিক, হতে পারে আপেক্ষিকভাবে অদৃশ্য– তাই এর থেকে ভয়ঙ্কর কোনো মানবসৃষ্ট বস্তুর সাথে প্রাত্যহিক জীবনে এত অঙ্গাঙ্গীভাবে আমরা জড়িত থাকি না। এটা সত্যি আমরা নিজেরাই জানি না বা বুঝতে পারি না কিংবা জানলেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের আকার এত ছোট যে একে প্রায়ই অবহেলা করে থাকি।

মাইক্রোপ্লাস্টিক যেকোনো ধরনের প্লাস্টিকের ভগ্নাংশ মাত্র। এটা যেকোনো প্লাস্টিকই হতে পারে। যে বস্তুর দৈহিক আকার আছে আর যা প্লাস্টিক যৌগ বা পলিমার দিয়ে তৈরি, তার যেকোনো টুকরোই সেই প্লাস্টিকের যাবতীয় মৌলিক ধর্ম ধারণ করে, তাই সে প্লাস্টিক যত ছোটই হোক আর তাকে যে নামই দেওয়া হোক শেষ পর্যন্ত তা প্লাস্টিকই থেকে যায়। ওই হিসেবে প্লাস্টিকের তৈরি পানীয় জলের গ্লাস আর সেই গ্লাসের ভেঙ্গে যাওয়া টুকরো দুই-ই প্লাস্টিক। এটা বলার কারণ এই যে, শুধু বড় প্লাস্টিকই পরিবেশের জন্য খারাপ– ওই ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

আকারের দিক থেকে প্লাস্টিকের ভগ্নাংশের আরও কিছু প্রকারভেদ আছে যা তাদের আকারের ওপর নির্ভর করে এক এক মানদণ্ডে ফেলা হয়েছে। মাইক্রোপ্লাস্টিক তাদের একটি।

প্রচলিত ধারণায় বড় আকারের প্লাস্টিক ভেঙ্গে গিয়ে বা ভেঙ্গে যেতে যেতে যখন ছোট হতে থাকে, তখনই কেবল মাইক্রোপ্লাস্টিক তৈরি হয়। ব্যাপরটাকে আরও সহজ করে বলা যায়, যেমন আমরা ভাবছি একটা প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হলো। এই বোতল যদি কেউ সংগ্রহ না করে বা কোনো ভাবে রিসাইক্লিং না হয়, তবে এটা কোনো না কোনোভাবে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে বা হাওয়ার তোড়ে ভেঙ্গে যেতে থাকবে। রোদের তাপে পদার্থের আনবিক ঘনত্বের তারতম্য হয় আর এতে পদার্থের ভাঙ্গার (ভঙ্গুরতা) প্রবনতা বৃদ্ধি পায়। তবেই কেবল মাইক্রোপ্লাস্টিক তৈরি হয়। একটু আগেই যা বলা হয়েছে, যেকোনো ধরনের প্লাস্টিক ভেঙ্গে ছোট হলেই তা মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয় এর আকারের কারণে। আর প্লাস্টিক প্লাস্টিকই থাকবে।

মাইক্রোপ্লাস্টিক নিয়ে আমাদের এই সামাজিক বা সামগ্রিক ধারণা ভুল নয় কিন্তু কিছুটা অপ্রতুল। কেবল ভেঙ্গেই যে মাইক্রোপ্লাস্টিক তৈরি হবে তা নয়। আমরা প্রতিদিন যেসব পণ্য ব্যবহার করছি তার মধ্যেও এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের ব্যবহার আছে। যা আমরা হয়তো জানিই না। যার সহজ উদাহরণ হলো প্রসাধন সামগ্রী। এমন আরও অনেক পণ্যের নাম আসবে। এই লেখায় শুধু প্রসাধনী নিয়ে বলার চেষ্টা করছি।

প্রতি বছর প্রায় ৩৮০০ টন মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবেশের সাথে মিশে যায় আর এটা আসে শুধু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত প্রসাধন সামগ্রীর মাধ্যমে। এই পরিসংখ্যান কেবল ইউরোপ মহাদেশের। বলা বাহুল্য, শুধু ইউরোপের নামই নেওয়া গেল তার কারণ, তারা এই সংখ্যাটা প্রকাশ করেছে নিজে থেকেই। আমাদের মতো দেশ বা পৃথিবীর আরও সব দেশের হয়ে এই পরিমাণ কত হবে, তা বলা দূরূহ হবে। তবে তা যে সংখ্যায় বিশাল হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ইউরোপে জীবনযাত্রার মান, পরিবেশের প্রতি সচেতনতা এবং সামগ্রিক ভাবে দায়বদ্ধতার মাপকাঠিতে পৃথিবীর অন্য যেকোনো মহাদেশের থেকে এগিয়ে তা আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয় না। তাই প্রসাধনী সামগ্রী থেকে যুক্ত হওয়া এই বিশাল পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পরিবেশের জন্য ভয়াবহ সংবাদ– এ উপলব্ধি থেকে ইউরোপিয়ান কেমিক্যাল এজেন্সি (ইসিএইচএ) ইউরোপিয় ইউনিয়নের কাছে এ বছর (২০২২) এক প্রস্তাবনা রাখতে পারে যার মূলে থাকছে প্রসাধনী সামগ্রীতে ইচ্ছাকৃতভাবে আর মাইক্রোপ্লাস্টিক ব্যবহার না করা।

এই প্রস্তাবনা আসার মূল কারণ হলো প্রসাধনীতে ইচ্ছাকৃতভাবে মাইক্রোপ্লাস্টিকের ব্যবহার। যদিও প্লাস্টিক ব্যবহারের বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বা নীতিমালা আছে। সেটা আবার আরেক আলোচনার বিষয়। আন্তর্জাতিকভাবে যারা প্রসাধনী পণ্য তৈরি করছেন তারা নিশ্চয়ই ওইসব নীতিমালা বা মানদণ্ড মেনেই করছেন। সেখানেই প্রশ্ন করার অপচেষ্টা না করাই ভাল। প্রসাধনী শিল্পের উৎপত্তি আর ব্যবহারিক বিস্তৃতি এবং সময়ের সাথে সাথে পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কাচামালের পার্শ্বপ্রতিত্রিয়ায় এ ধরনের প্রস্তাবনার উদ্ভব হচ্ছে বা সামনে আরও হতে পারে, তা বলাই যায়। এখানে আমরা ধরে নিতে পারি, যে মানদণ্ডগুলো তৈরি করা হয়েছিল তা পরিবর্তনের কথা ভাবা হচ্ছে সঙ্গত কারণেই। এভাবে বলার কারণ হলো প্রসাধনী পণ্যে প্লাস্টিক (সিন্থেটিক পলিমার) আছে– এটা এখন সত্য। সেটা যে নামেই থাকুক [১,২]।

আমাদের এই সভ্যতা অনেকখানিই প্লাস্টিক নির্ভর। প্লাস্টিকের উপস্থিতি এখন সবখানে। সেটা পানীয় জলে হোক, খাবারে হোক বা বাতাসে। প্লাস্টিকের উপস্থিতি নাই এমন একটা কিছুর নাম বলতে বলা হলে রীতিমতো গবেষণা করতে হতে পারে। এই প্লাস্টিকের সবই আবার বড় আকারের নয়। এর মধ্যে বেশিরভাগই মানদণ্ড মেনে গবেষণাগারে তৈরি করা প্লাস্টিক বা সিন্থেটিক পলিমার। আর এই পণ্যের মূল পোষকগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রসাধনী, রঙ, ওষুদ থেকে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনকারী। শুধু ইউরোপিয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো থেকে এই কয় ধরনের পণ্য থেকে বছরে প্রায় ৪২,০০০ টন প্লাস্টিক জাতীয় পরিবেশদূষক নিঃস্বরিত হয় মাইক্রোপ্লাস্টিক আকারে [৩]। আমাদের নিত্যকার জীবনে ব্যবহৃত এসব অতিসাধারণ পণ্য থেকে নিঃস্বরিত হওয়া এই মাইক্রোপ্লাস্টিক একবার পরিবেশের সাথে মিশে গেলে তা উঠিয়ে নিয়ে আসার কোনো পদ্ধতি এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। পরিবেশ তথা নিজেদের এই অপূরণীয় ক্ষতির দায়ভার যে কার, সেই প্রশ্ন রাখাই যায়।

যে কারণে এই ভাবনা

কিছু ক্ষেত্রে এক এক ধরনের প্রসাধনী পণ্যের উপাদানে প্রায় ৯০% সিন্থেটিক পলিমার, প্লাস্টিক পলিমার বা এক কথায় প্লাস্টিকের উপস্থিতি থাকে [৪]। এই প্রসাধনী পণ্যগুলোর অণুবীক্ষণিক বা ক্ষুদ্র উপাদানগুলো একবার যখন ব্যবহৃত হয়ে যায়, তা ধৌতকরণের মাধ্যমে আমাদের বাথরুম, টয়েলেট, নদী-নালা-পুকুর (যে স্থানে ধৌতকরণ ঘটে) থেকে তা পয়ঃনিষ্কাশন (সুয়্যার সিস্টেম) প্রক্রিয়াকরণ প্রণালীতে চলে আসে। আমাদের ঘর-বাড়ি থেকে যে ব্যবহৃত পানি বের করে দিচ্ছি প্রতিদিন, তা একটি প্রক্রিয়াকরণ প্রণালীর অর্ন্তগত (এটি ইউরোপিয়ান মানদণ্ড। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমাদের গৃহস্থলীর জলীয়/তরল বর্জ্য ঠিক কীভাবে প্রক্রিয়াজাত হয় তার কোনো হিসেব পাওয়া যায়নি বা আমি জানি না।) যদি আরও সরল করে বলা হয়, বাথরুমে যে পানি একবার ব্যবহার করার পর ফেলে দেওয়া হয়, সেই পানি একটি আইডিয়াল সিস্টেমে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে যাবার কথা বা যায়। যদি না যায় তবে ওই পরিমাণ পানি পরিবেশে সরাসরি যুক্ত হয়। সেটা নদী-নালা-ডোবা বা কোনো জলাধার হতে পারে। মনে রাখতে হবে ওই পানির সাথে বাথরুমে ব্যবহার করা প্রসাধনী পণ্য যুক্ত হয়। এই পণ্যে যে পরিমাণ প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ থাকবে [৪] ঠিক সমপরিমাণ প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ পরিবেশে যুক্ত হবে। যদি এর মাঝে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে পানিগুলোকে পরিশোধন করা সম্ভব হয় তবে পরিশোধনের পর যে অবশিষ্টাংশ রয়ে যাবে, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়। তবে ট্রিটমেন্ট প্লান্টেও কিছু কাজ যে হয় না, তা নয়।

প্রসাধনী প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো তাদের বিপননজাত পণ্যের উপাদান তালিকায় প্লাস্টিক হিসেবে কোনো পণ্যের পরিচয় দেয় না। দেয়– ওয়াটার সলিউবল পলিমার / ডাবলিউএসপি (পানিতে দ্রবনীয়), লিকুইড পলিমার, সেমি-সলিড পলিমার, বায়োডিগ্রেডেবল পলিমার ইত্যাদি নামে। যার সবই মানুষ্য তৈরি বা ইঞ্জিনিয়ার্ড ন্যানো-প্লাস্টিক। মনে রাখা জরুরী যে নামের সাথে প্লাস্টিক থাকবে, তা পরিশেষে প্লাস্টিকই যা আগে কিছুটা বলাও হয়েছে। ব্যবসার সুবিধার্থে, মানদণ্ডের ছাকনি দিয়ে বের হয়ে গেলেও তা প্লাস্টিকই থেকে যায়।

অভিধানিক ভাবে এই ওয়াটার সলিউবল পলিমারগুলো ওই ধরনের প্লাস্টিক যারা পানিতে দ্রবীভূত হয়ে যেতে পারে। আর এ জন্যই এটা নানার ধরনের প্রসাধনী, রঙ, বিল্ডিং ম্যাটেরিয়াল, কৃষিজাত পণ্য ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পলিভিনাইল অ্যালকোহল নামে এক ধরনের ওয়াটার সলিউবল পলিমারই পৃথিবীতে গত এক শতকে সব থেকে বেশি উৎপাদিত ওয়াটার সলিউবল পলিমার যার ব্যবহার সব থেকে বেশি, [৫] ৬৫০,০০০ টন প্রতিবছর। [৬]

যদিও বলা হয়ে থাকে, এই ওয়াটার সলিউবল পলিমারগুলো পানিতে পুরোপুরি দ্রবীভূত হয়। কিন্তু এখানে কিছু কিন্তু রয়ে গেছে। এই দ্রবীভূত হবার প্রবনতা কমতে থাকে যখন ঘনত্ব বাড়তে থাকে। ব্যাপারটা আরও জটিল হয়ে যায় যখন এই দ্রবীভূতকরণের জন্য নির্ধারিত পরিমাণের অনুঘটকের প্রয়োজন হয়। যেমন জলীয় বাস্পের পরিমাণ বা হিউমিডিটি, বিশেষ ধরনের অনুজীব বা মাইক্রোঅর্গানিজম এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ সময়, তাপমাত্রাও। এই সময়ের রকমফের হবে যদি ওয়াটার সলিউবল পলিমার কোনো ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মধ্যে দিয়ে যায়। যদি তাও হয়, তারপরও এর পুরোটা পানিতে দ্রবীভূত হতে যে পরিমাণ পুঙ্খানুপুঙ্খ নিয়ামকের প্রয়োজন হবে তা পরীক্ষাগার ছাড়া আদতেই প্রায় অসম্ভব। এ থেকেই বোঝা সম্ভব, যেভাবেই বলা হোক ওয়াটার সলিউবল পলিমার থেকে বের হওয়া প্লাস্টিক পলিমারগুলোর একটা বড় অংশই পরিবেশে মিশবে। [৭]

এভাবে প্রসাধনী পণ্যে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পলিমারসম্পন্ন উপাদানগুলো পর্যবেক্ষণ করলে এটা বলা যায়, এই শিল্পে প্লাস্টিকের ব্যবহার অপরিহার্য যেমন, তেমন অপরিসীমও। কিন্তু এটা আমাদের জানার বাইরে রয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। বেশ কিছু পরীক্ষায় উঠে এসেছে বাজারের প্রায় ১০টা প্রসাধনীর মধ্যে ৯টিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যাবে বা যায় কিন্তু বিষয়টি ওই পণ্য যে উপরকণ বা উপাদানে তৈরি হয় সেই তালিকায় বলা হয় না। এই পরীক্ষা যেমন ইউরোপের বাজার থেকে নেওয়া পণ্যের ওপর চালানো হয়েছে [৮]। তেমনি এশিয়ার বাজার থেকে নেওয়া ১৪৪টি পণ্যের মধ্যে ছিল ৬৮টি শরীরে ব্যবহারের পণ্য, ৩১টি মুখে ব্যবহারের পণ্য আর বাকিগুলো বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী পণ্য। এই পরীক্ষার ফলাফলেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের নিঃস্বরণ হয় তা দেখানো হয়েছে। [২]

এমন উদাহরণ হয়তো আরও অনেক আছে বা থাকবে। এসব পরীক্ষার প্রতিউত্তরও হয়তো আছে। কিন্তু একটা সত্যকে কিছুটা অর্ধসত্যের মতো করে আমাদের দেওয়া হচ্ছে– কেউ বলছে না আমরা প্রতিদিন যা ব্যবহার করছি তাতে কোনো প্লাস্টিক আছে, নাকি নেই। আমাদের মতো আমজনতার জন্য হয়তো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মারপ্যাচ ধরতে পারা কঠিন। তাই সহজ করে কেউ কি বলছে, ‘আপনি যা মুখে মাখছেন তাতে কোনো প্লাস্টিক নেই?’ আমজনতা হিসেবে কি আমরা একবারও ভেবে দেখেছি আমাদের বলিরেখা ঢাকার জন্য যা ব্যবহার করছি তা কি আসলেও স্বাস্থ্যকর? ব্যাপরটার অনেকটা প্লাস্টার করার মতো। ইটের গাঁথুনি দেওয়ার পর এতে সিমেন্ট আর বালু দিয়ে আরেকটা আবরণ দেওয়া হয় যাতে ইটের দেয়ালের এবড়ো-থেবড়ো ভাবটা না থাকে। অবশ্যই এটা দেখতে ভাল দেখায়, কিন্তু এরও মূলও আছে। আর এর দায় নেওয়ার জন্য কাধটা আমাদেরই পাততে হবে।

ভোগবাদী পৃথিবীতে আপনি-আমিও ভোগবাদী। আমরা যেমন না কিনে থাকতে পারব না, যা ব্যবহার করছি তা থেকে চট করে সরেও যেতে পারব না। যারা এই পণ্য উৎপাদন করছেনও তারাও আমাদের গ্রিনওয়াশ [৯] করছেন। বলছেন এটা ভাল তুমি এটা ব্যবহার করো। এটা পরিবেশ বান্ধব। আমরা হামলে পড়ছি।

কী করা যায়?

অন্য সকলের মতোই আমি-আপনিও এই পৃথিবীর জন্য ভাবি। এটা মোটেও বাড়িয়ে বলা নয়। আমরা আমাদের মতো করে অনুকম্পিত হই, অনুশোচনায় বিহবল হই হয়তো। কিন্তু কী করি! প্রসাধন তো ছাড়া যাবে না রোজ রোজ। নিজেকে সুন্দর দেখতে বা দেখাতে কার না ভালো লাগে। তবে, একদিন ধরণীর জন্য সুন্দর থাকি, অন্তত একদিন। তা সপ্তাহে হোক, মাসে হোক বা বছরে। প্লাস্টিকে ভরা প্রসাধন ছাড়া।

Leave a Reply