অ্যামেরিকায় অ্যাডভেঞ্চার

অ্যামেরিকায় অ্যাডভেঞ্চার

১ আগস্ট ২০১২

অ্যামেরিকার পশ্চিম থেকে পূর্ব উপকূল৷ দূরত্বের হিসেবে পাঁচ হাজার মাইল৷ সেই পথ দুই বাঙালি তরুণ পাড়ি দিচ্ছেন সাইকেলে৷ উদ্দেশ্য পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা৷ যুক্তরাষ্ট্রে প্লাস্টিকের ব্যবহারে যে ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশের৷

https://p.dw.com/p/15hML

ছবি: Muntasir Mamun Imran

মুনতাসির মামুন এবং মোহাম্মদ উজ্জ্বল৷ এই দুই বাংলাদেশি তরুণ গত জুন মাসের ১১ তারিখ শুরু করেন সাইকেল ভ্রমণ৷ গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল থেকে ওয়াশিংটন ডিসি৷ আগামী ১৪ বা ১৫ আগস্ট শেষ হতে পারে তাদের এই দীর্ঘ যাত্রা৷ এই ভ্রমণ কি শুধুই আনন্দের জন্য, নাকি আরো কোনো উদ্দেশ্য আছে? ডয়চে ভেলেকে মুনতাসির মামুন জানান, ‘‘আমাদের প্রোগ্রামের নাম হচ্ছে ‘ট্রাসম্যানিয়াক’৷ ট্রাস হচ্ছে আবর্জনা, আর ম্যানিয়াক হচ্ছে যিনি আবর্জনা সম্পর্কে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন৷ আমরা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম থেকে পূর্ব উপকূলে যাচ্ছি৷ আমরা যখন রাস্তা দিয়ে যাই, তখন রাস্তার পাশে যে জায়গাটুকু থাকে সেখানে যদি কোনো প্লাস্টিকের তৈরি পণ্য আমরা পাই, ধরেন এটা প্লাস্টিক বোতল হতে পারে, ফুড ব়্যাপার হতে পারে, কাঁচের বোতল হতে পারে, যেগুলো আসলে নন ‘বায়োডিগ্রেডেবল’ সেগুলো আমরা শনাক্ত করছি৷ এরপর কিছু নির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছি৷ কত মাইলে এধরনের কতগুলো পণ্য আমরা দেখলাম সেটার একটা ছোট্ট পরিসংখ্যান তৈরি করছি আমরা৷”

500 Meilen Radtour Bengali USA Muntasir Mamun Mohammad Ujjal Klimawandel Plastik Sammelaktion
মুনতাসির মামুন এবং মোহাম্মদ উজ্জ্বলের এই সাফল্য তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করছেছবি: Muntasir Mamun Imran

প্লাস্টিক বিষয়ক তথ্য সংগ্রহের পর একটি মোবাইল এপ্লিকেশনের মাধ্যমে সেটা ইন্টারনেটে চালান করে দেন মুনতাসিররা৷ এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্লাস্টিক ব্যবহারের ভয়াবহতা সম্পর্কে আরো ধারণা অর্জন সম্ভব হচ্ছে৷ আর প্লাস্টিকের এই ব্যবহার ক্ষতি করছে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর৷ মামুন বলেন, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি৷ প্লাস্টিকের পণ্য তৈরির পেছনে জ্বালানি প্রয়োজন হয়৷ এটি গ্যাস হতে পারে, এটি পরিবহনের জন্য জ্বালানি দরকার হয়, পানি প্রয়োজন হয়৷ ফলে যতবেশি এনার্জি লাগবে ততবেশি কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি হবে৷ কার্বন নির্গমন যত বাড়বে সেটা কিন্তু আমাদের মত নীচুতে অবস্থিত দেশগুলোর উপর প্রভাব তৈরি করবে৷”

500 Meilen Radtour Bengali USA Muntasir Mamun Mohammad Ujjal Klimawandel Plastik Sammelaktion
পাঁচ হাজার মাইল সাইকেল ভ্রমণের পথেছবি: Muntasir Mamun Imran

পরিবেশ সচেতনতায় এই টেনডেম সাইকেল ভ্রমণ হলেও কাজটা মোটেই সহজ নয়৷ বিশেষ করে প্রচণ্ড গরম এবং বিপরীতমুখী বায়ু প্রবাহ তাদের জন্য কষ্টকর৷ এই বিষয়ে মুনতাসির বলেন,‘‘আমরা যখন সিয়াটল থেকে শুরু করি, পশ্চিম উপকূল থেকে, তখন রাস্তার পাশে বরফ থাকতো৷ এরপর আস্তে আস্তে গরম বাড়তে শুরু করলো৷ গত তিন সপ্তাহ ধরে এত বেশি গরম যে, দুপুর সাড়ে এগারোটা বা বারোটার পরে রাস্তায় থাকাটা একটু জটিল হয়ে যাচ্ছে৷ আমরা সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা পেয়েছি নেবরাস্কা’তে, ১১২ ডিগ্রি ফারেনহাইট৷ তারপর গত পরশু (২৫-০৭-১২) এবং তার আগের দিন পেয়েছে ১০৭, ১০৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট৷ এই দিক বিবেচনায় আমাদের ভাগ্যটা একটু খারাপ৷ তারপর আবার আছে বাতাস৷”

ডয়চে ভেলেকে এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় আইওয়া’তে অবস্থান করছিলেন মুনতাসির মামুন এবং তাঁর সহ-চালক মোহাম্মদ উজ্জ্বল৷ মার্কিন সময় খুব সকালে এই সাক্ষাৎকার প্রদান করেন তিনি৷ সেটি ছিল তাদের সাইকেল চালানোর প্রস্তুতির সময়৷ মুনতাসির জানান, মূলত বন্ধুবান্ধবদের আর্থিক সহায়তায় এই সফর শুরু করেন তারা৷ এছাড়া প্রযুক্তিগত সহায়তা করেছে এমআইটি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছি সেটা তৈরির পেছনে এমআইটি’র অবদান রয়েছে৷ এছাড়া আমি একটি সংস্থার বাংলাদেশ অংশ দেখি, এই সংস্থা গত ২৬ বছর ধরে আবর্জনা বিষয়ে কাজ করছে৷ তারা আমাদের অংশীদার হিসেবে আমাদের সংবাদ তাদের নেটওয়ার্কে বিতরণ করছে৷”

প্রসঙ্গত, বাংলা ব্লগ সাইট সামহয়্যার ইন ব্লগে নিয়মিতই সাইকেল ভ্রমণের সবিশেষ খবরাখবর জানাচ্ছেন মুনতাসির৷ এছাড়া trashmaniac.com ওয়েবসাইটেও এই সাইকেল ভ্রমণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

Leave a Reply