মাইক্রোপ্লাস্টিক, তৈরি পোশাক এবং আমাদের দায়
On bdnews24.com
আমরা যে ফাস্ট ফ্যাশনের যুগে প্রবেশ করেছি তাতে বছরে প্রতিনিয়ত আমরা কাপড় ধুই। বছরে এই কাপড় ধোওয়ার কারণেই ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় ২ দশমিক ২ কোটি টন মাইক্রোপ্লাস্টিক সমুদ্রের পানিতে মিশবে।
বারবার একই কথা বলা হলে নাকি তা মাথার মধ্যে গেঁথে যায়। কণ্ঠস্থ করার মতন। ‘মাইক্রোপ্লাস্টিক’ শব্দটাকে আমাদের মনের মধ্যে গেঁথে নেওয়ার জন্য- এর অর্থ ফের মনে করা যেতে পারে। মাইক্রোপ্লাস্টিক হলো ক্ষুদ্র আকারের প্লাস্টিক বা প্লাস্টিকের কণা, যার আকৃতি ৫ মিলিমিটার বা এক ইঞ্চির ১৬ ভাগের তিন ভাগের কম হয়।
মাইক্রোপ্লাস্টিক বাস্তবে এর থেকে ছোট আকারেরই হয় বেশি। ছোট মানে ভীষণ ছোট- যাকে খালি চোখে দেখা যায় না। তাই এর উপস্থিতি নিয়ে আমাদের মধ্যে বিচলিত হওয়ার কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। যে বস্তুকে দেখাই যায় না, তাকে অবহেলা করা অনেক সহজ। আমাদের এই নিয়মিত পর্যালোচনার একটিই কারণ, আমরা যেন এই মাইক্রোপ্লাস্টিক- যাকে দেখা যায় না, তার ভয়াবহতার আভাস অনুধাবন করতে পারি এবং তার সাথে কীভাবে জড়িয়ে গেছি, তাও আন্দাজ করতে পারি।
অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান। জীবনধারণের জন্য মৌলিক কিংবা অত্যাবশকীয় যাই বলা হোক না কেন, এই তিন শব্দের সাথে আমরা অনেক আগে থেকেই পরিচিত। মানব সভ্যতার ইতিহাস শুরু হওয়ার আগে, জীবন-ধারণের ন্যূনতম যে নিয়ামকের প্রয়োজনীয়তা ধরা দেয়, তাদের মধ্যে সবার প্রথমে অবশ্যই খাদ্য। জীবিত যেকোনও প্রাণের জন্য খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা তার আয়ুর সম্পূরক। না খেয়ে কোনও প্রাণ বেঁচে থাকে বা থাকতে পারে কিনা তা আমার জানা নেই। যেদিন থেকে প্রাণের সূচনা এই গ্রহে, খাদ্যের উৎপত্তিও সেদিন থেকেই বলা যেতে পারে।
এখন প্রশ্ন আসে জীবনের জন্য খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা বুঝলাম। কিন্তু বস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব এমন কি বেশি? এর ব্যাখ্যায় মানবসভ্যতার ইতিহাসে যাওয়া যাবে। সেটা সময়সাপেক্ষও বটে। অল্প কথায় এভাবে বলা যায়- পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য আমরা গরমকালে এক ধরনের পোশাক আর শীতকালে আরেক ধরনের পোশাক পরি। পোশাক বা বস্ত্র বা যে নামেই পরিচিত হোক না কেন, তা কেবল লজ্জা নিবারণের নয়। অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রয়োজন।
প্রাণিকুলের মধ্যে মানুষ ছাড়া এই পরিমান স্থান পরিবর্তনের প্রবণতা আর কোন প্রাণির আছে কিনা- সেটা বিজ্ঞানীরা ভাল বলতে পারবেন। আর সভ্যতা বা জীবন ধারণের জন্য খাদ্য-আহরণ এই স্থান পরিবর্তনের অন্যতম কারণ। তা এই ইন্টারনেটের যুগেও সত্যি। একদম শুরুতে পশুর চামড়া দিয়ে পরিধেয় এর কাজ চললেও সময়ের সাথে সাথে তার বিবর্তন হয়েছে। ঠিক কবে থেকে আমরা, মানুষরা কাপড় বোনা শুরু করেছি তার সঠিক তথ্য বা তত্ত্বের উদাহরণ দেওয়া যাচ্ছে না।
এই বিবরণটুকুর প্রয়োজনীয়তা এ কারণে যে, বোনা কাপড়ের ইতিহাস সুপ্রাচীন। আমাদের আজকের আলোচনা কাপড় নিয়েই। এই কিছুদিন আগেও সুতি কাপড়ের আধিক্যই বেশি ছিল। তবে সেই সুতি কাপড়ের স্থান দখল করে নিয়েছে সিন্থেটিকের কাপড়।
কী এই সিন্থেটিক কাপড়? আর মাইক্রোপ্লাস্টিকের সাথে তার সংযোগ কোথায়?
বোনা কাপড় বা টেক্সটাইল হলো মাইক্রোপ্লাস্টিকের সব থেকে বড় উৎস। কানে লাগলেও ঘটনা সত্য। বৈশ্বিকভাবে যে মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবেশের সাথে নিঃসরিত হয় তার প্রায় ৩৪ দশমিক ৮ ভাগ আসে এই বোনা কাপড়/ টেক্সটাইল থেকে। [১]
কাপড় থেকে যে ক্ষুদ্রাকারের মাইক্রোপ্লাস্টিক ঝরে, তাকে বলা হয় ‘মাইক্রোফাইবার’। ফাইবারকে আমরা তন্তু বা সুতা বলতে পারি। সে হিসেবে মাইক্রোফাইবার হবে অতি ক্ষুদ্র সুতা/ সুতার অংশ বা ভগ্নাংশ। যে নামেই হোক, মাইক্রোফাইবারও প্লাস্টিক যৌগের সব গুণাগুণ যেহেতু বহন করে, তাই একে প্লাস্টিক বলাও ভুল হবে না। কাপড় ধোওয়ার সময় এর থেকে মাইক্রোফাইবার ঝরে বা খসে পড়ে। ঝরে পড়া প্লাস্টিকের সুতোগুলি পানির সাথে অতি সহজে মিশে পয়ঃশোধনাগারে যায়। যেখানে পয়ঃশোধনাগার নেই, সেখানে কী হয়, তাতে ব্যখ্যার প্রয়োজনীয়তা থাকছে না।
যদি এভাবে চিন্তা করি- একটা সিন্থেটিক কাপড়ে তৈরি একটা শার্ট ধুলে এর থেকে যে প্লাস্টিকে সুতাগুলো বের হবে, তা আমাদের বাথরুম/ ওয়াশিংমেশিন বা যে যেখানে যেভাবে ধৌত করেন সেখান থেকে কোথাও না কোথাও যাবে। সেই কোথাও না কোথাও এর শেষ ঠিকানা হয় কোনও না কোনও জলাধার। নদী-নালা-খাল-বিল-সাগর-মহাসাগর।
এর মধ্যে এই পানিকে পরিশোধন করা হয় তবে মাইক্রোফাইবারের পরিমাণ কিছুটা হয়তো কমে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই পরিমাণ অতিনগন্য বলে ধরা হয়। এখন আমরা বলতেই পারি, আমার সব কিছুই তো সুতি। ভাল। অতি উত্তম। কিন্তু পরিসংখ্যান অন্য কথা বলে। বর্তমানে মোট উৎপাদনের প্রায় ৫০ ভাগ কাপড় তৈরি হয় প্লাস্টিক (পলেস্টার/পলিয়েসটার, অ্যাক্রিলিক জাতীয়) থেকে। [২]
আর এই ধরনের একটা কাপড় একবার ধুলে বা কাচলে প্রায় ৭ লাখ (৭,০০,০০০) মাইক্রোফাইবার ঝরে পড়ে [৩]।
আর যদি এভাবে চলতে থাকে তবে ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় ২২ মিলিয়ন টন (২.২ কোটি টন) মাইক্রোপ্লাস্টিক সমুদ্রে যাবে শুধু পোশাক শিল্প/প্লাস্টিকে তৈরি পোশাক/ আমাদের পরিধেয় বস্ত্র থেকে। [৪] চিন্তা করা যায় এর পরিমান কতো বড় বা এর ভয়াবহতা? আমরা যদি এর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির দিকে একটু নজর দেই তাহলে দেখা যায় – এই মাইক্রোফাইবারগুলো পানিতে মিশে গিয়ে পানিতে দ্রবীভুত বা মিশে থাকা পলিক্লরিনেটেড বাইফিনাইল (Polychlorinated Biphenyls) সংক্ষেপে পিসিবি এবং কার্সিনোজেনিক পারসিসটেন্ট অর্গানিক সংক্ষেপে পিওপি-কে শুষে নেয়। এছাড়া যে রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে কাপড় তৈরি হয়েছিল বা কাপড়ের ভঙ্গুরতা কমানোর জন্য যাতে প্লাস্টিসাইজার (সাদামাটাভাবে বললে যা দিয়ে কাপড়েরর আয়ু বাড়ানো হয়), তাপমাত্রার সংবেদনশীলতা বাড়ানোর রাসায়নিক, অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এজেন্ট (যা পানিতে থাকা ব্যাক্টেরিয়ার মতন আনুবীক্ষণিক প্রাণ/মাইক্রোঅর্গানিজম মেরে ফেলে বা বাড়তে বাধা দেয়) তারও নিঃসরণ ঘটায়।
এই রাসায়নিকগুলি পানিতে যেমন মিশে যেতে থাকে তেমনি জলজ প্রাণীরা যদি এই মাইক্রোফাইবার খেয়ে ফেলে, অতিক্ষুদ্র হবার কারণে সেগুলি মিশে যায় রক্তের সঙ্গে। এর ফলে রক্তনালীতে প্রবাহ, কোষে অক্সিজেনের মাত্রা কমা থেকে শুরু করে কোষের বা দেহের বর্ধনশীলতা হ্রাস, সর্বপরি প্রজনন সক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। আমরা মানুষ যেহেতু প্রায় সর্বভুক এবং সামুদ্রিক খাবারের গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বব্যপী- তাই এসব সমস্যা আমাদের নিজেদের দেহেও চলে আসে। [৫], [৬]
অতি সাধারণভাবে বলা হলে- আমরা যা যা দিয়ে একটা সুতা তৈরি করি, তাতে রং বা ডাই করে সেই সুতা দিয়ে কাপড় বুনে যে পরিধেয়ই তৈরি করা হোক না কেন – তা থেকে মাইক্রোফাইবার ঝরে পড়তে থাকবে। এর সাথে যে যে রাসায়নিক প্রস্তুত প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়েছে তাও পরিবেশে যোগ হবে। এর ব্যত্যয় হবার নয়।
এই সমস্যা থেকে বাঁচার উপায়ের মধ্যে আদর্শ পরিবেশ হিসেবে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের একটা বড় কার্যকারিতা আছে। আবার আমাদের মতন দেশে যেখানে মোট জনসংখ্যার একটা বড় অংশ কাপড় ধোয়ার কাজটি করে উন্মুক্ত স্থানে বা প্রবাহমান কিংবা আবদ্ধ পানিতে (উন্মুক্ত বলতে টিউবওয়েলে পাড়, নলকূপের পাড় ধরা হচ্ছে- যেখান থেকে ধৌতকরণের পর পানি সরাসরি মাটিতে বা পরিবেশের সাথে মিশে যাবে/যেতে পারে বা যায়। আর প্রবাহমান বা আবদ্ধ পানি বলতে নদী-নালা-খাল-বিল-পুকুর ইত্যাদিকে বোঝানো হয়েছে) তাই পয়ঃশোধনাগারে ব্যবহৃত পানির যাবার সম্ভবনা কতটুকু সেটা আমরা নিজেরাই ধারণা করতে পারি। এর অর্থ কাপড় থেকে বের হওয়া মাইক্রোফাইবার সরাসরি মাটিতে কিংবা পানিতে চলে আসবে বলেই ধরে নেওয়া যায়।
কী করা যায়?
কাপড় না পরে তো থাকা যাবে না। একই কাপড় আবার রোজ রোজ পরাও যাবে না। কিন্তু কিছু জিনিস আমাদের নিজেদের উপর নির্ভর করে। যেমন- আমরা কী পরিমাণ কাপড় কিনছি! এর পরিমাণ একটা বড় অংশ। আগে আমরা প্রতিবছর যে পরিমাণ কাপড় কিনতাম, তার থেকে বর্তমানের পার্থক্যের হিসাব নিজের নিজের কাছে আছে। এই পরিবর্তনের জন্য আমাদের দায় যেমন আছে, তেমনি যারা এই কাপড় বা পরিধেয় তৈরি করছেন তাদেরও আছে। আগে যেমন আমাদের একটা শার্ট বানাবার জন্য দর্জির কাছে যেতে হত। সেই চল এখন নাই বললেই চলে। আমরা হলপ করে কী বলতে পারবো শেষ কবে দর্জির কাছ থেকে কিছু বানিয়েছি? এখানে নারীরা কিছুটা হলেও পিছিয়ে। এই পিছিয়ে থাকাটা এগিয়ে থাকার মতন। তাদের জন্য সব পরিধেয় এখনও রেডিমেড হওয়া সম্ভব হয়নি। দর্জি-দোকানমুখিতা কমে যাবার কারণ এই পরিধেয় বস্ত্রের সহজলভ্যতা। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে- এতে সমস্যা কোথায়! সমস্যা কোথাও নেই। সমস্যা হলো, আমাদের ক্রয়-সক্ষমতার সাথে যা বাড়তে থাকলো তা হল সহজলভ্য সব কিছু ক্রয় করার চাহিদা। প্রয়োজনের, অপ্রয়োজনে হাতের নাগালে পাওয়া যায় বা যাচ্ছে বলে যখন তখন যা কিছু কিনে ফেলা হচ্ছে। কয়দিন পরছি তার হিসাব রাখাও দুরূহ।
হুট করে যেমন আমরা বার্গার-পিৎজা-স্যান্ডউইচ বা মোড়কজাত কেক, রুটি খাওয়া শুরু করলাম যাকে আমরা ফাস্ট ফুড বলছি। ক্রমাগত হুটহাট করে পরিধেয় এর এমন একটা নাম আছে। যাকে বলা হচ্ছে ‘ফাস্ট ফ্যাশন ‘[৭] । শুনতে দারুণ মনে হলেও, আজকের এই পরিবেশ বিপর্যয়ের কাছাকাছি আমাদের অবস্থানের অন্যতম কারণ, কাপড়/ পরিধেয় কেনার প্রবণতার।
১৯৯০ সালে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রথমবারের মতন ‘ফাস্ট ফ্যাশন’ শব্দের ব্যবহার হয় একটি বড় পোশাক প্রস্তুককারকের উৎপাদন সক্ষমতা বোঝাবার জন্য। সেই বড় পোশাক প্রস্তুককারক মাত্র ১৫ দিনে তাদের যে কোনও নতুন ডিজাইনের পোশাককে খুচরা বাজারে নিয়ে আসতে সক্ষমতা দেখাতে পারেন। এটা অবশ্য একধরনের বিপ্লবের মতো। যেখানে আগে এই একই কাজ করতে আরও অনেক বেশি সময়ের প্রয়োজন হতো। এখন এটি ঠিক যেন ফাস্টফুডের মতো – কিনলাম, খেয়ে নিলাম। অপেক্ষার কোন প্রয়োজন পরে না। তেমনি দোকানে গেলাম, কিনে নিলাম, গায়ে চাপিয়ে বেড়িয়ে এলাম – এই হলো ফাস্ট ফ্যাশন। যার প্রায় ৮৫ ভাগ পণ্য একবছরের মধ্যে আর্বজনা হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়। আর এই পরিমাণ কাপড় ধৌতকরণের ফলে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ টন মাইক্রোপ্লাস্টিক/ মাইক্রোফাইবার সমুদ্রে গিয়ে পড়ে [৮]। এই ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির তিনটি নিয়ামকের দায়ভার পরিবেশ বিনষ্টের অন্যতম। এরা হলো ডাই করা বা কাপড়ে রং দেওয়াতে ৩৬ শতাংশ, সুতা তৈরিতে ২৮ শতাংশ এবং কাপড় তৈরিতে ১৫ শতাংশ [৯] ।
আমাদের দায় নেওয়ার জন্য একটা উদাহরণ টানা যায়।
শীত এলেই আমরা শীতার্তদের জন্য শীতবস্ত্র বিলি করে থাকি। বিলি করা বস্ত্রাদির মধ্যে অন্যতম থাকে ‘কম্বল’। কম্বল সংগ্রহ, বিলিবণ্টন জাতীয় কাজে আমাদের মধ্যে অনেকেরই অভিজ্ঞতা আছে। শীতে কেউ কষ্ট পাক- এটা আমরা অবশ্যই চাই না। কম্বলের দাম কম এবং সহজলভ্য হবার কারণে দান হিসেবে এর থেকে মোক্ষম কোনও শীতবস্ত্র আর হয় না। এই কম্বলগুলো ফ্লিস (Fleeec) নামে পরিচিত। এটা একধরনের কাপড় যা পলিইথিলিন টেরাপথালেট (polyethylene terephthalate / PET) বা পিইটি নামক পলিইথিলিন (এক ধরনের পলিথিন যা দিয়ে খাবার পানি, কোমলপানীয় ইত্যাদির বোতল তৈরি করা হয়।)। কেবল যে শুধু পিইটি দিয়েই এই কাপড় তৈরি হয় তা নয়। এর সাথে প্রাকৃতিক ফাইবার যেমন উল, পুন:ব্যবহার যোগ্য সুতা বা কাপড় এমনকি রিসাইকেল্ড পিইটিও যুক্ত করা যেতে পারে। কিন্তু সত্য যেটা সেটা হলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই জাতীয় কাপড় অপ্রাকৃতিক বা ম্যানমেইড ম্যাটেরিয়ালে তৈরি হয়।
১৯৭০ সালে পোলারটেক নামের এক আমেরিকান কোম্পানি প্রথমবারের মতো এই কাপড়ের উৎপাদন করে। নামটা শুনেই একটা কথা মাথায় আসে – পোল বা মেরু বা অতি শীতল স্থান। ঘটনাও তাই। এই কাপড় তৈরির সবথেকে বড় কারণ ছিল শীত থেকে বাঁচার পাশাপাশি হালকাও হবে- এমন এক ধরনের কাপড় তৈরি করা। তাই শুরু থেকেই শীতকালীন বা শীত প্রধান দেশের নিত্য ব্যবহার্য থেকে ক্রীড়া উপকরণে এই কাপড়ের ব্যবহার অনস্বীকার্য হয়ে পড়ে। এখানে আরেকটা বিষয় বহাল। শীত প্রধান অঞ্চলগুলোতে কাপড় ধোয়ার প্রবণতা গ্রীষ্ম প্রধান দেশের তুলনায় কম হবার কথা। অতি সাধারণভাবে যদি আমরা ভাবি, শীতে একটা জ্যাকেট আমরা রোজ ব্যবহার করলেও কয়বার ধুই? তার উত্তর আমরা নিজেরাই দিতে পারি।
এই ধৌতকরণ খুব গুরুত্বপূর্ণ কেননা এই ফ্লিস কাপড়ে তৈরি একটা জ্যাকেট একবার ধোয়া হলে তা থেকে ১ দশমিক ৭ মিলিগ্রাম মাইক্রোফাইবার ঝরে পড়ে। [১০]
কেনার পরই কিংবা কেবল শীতপ্রধান অঞ্চলে যেখানে কাপড় ধোয়ার প্রয়োজনীতা বা প্রবণতা (তুলনামুলক ভাবে বা ধারণা করা যেতে পারে) কম সেখানে এই জাতীয় কাপড় হয়তো পরিবেশের জন্য (তুলনামূলকভাবে) কম ক্ষতিকারক। কিন্তু যদি এই একই কাপড়ে আমরা কম্বল বানাই, আর সে কম্বল যদি প্রতিবছর হাজার হাজার শীতাক্রান্ত মানুষের মাঝে বিলি করি। আর সে কম্বলের স্থায়িত্ব হয় কম- সেই দায় এড়ানোর জন্য অন্যের কাঁধ না খোঁজাই ভাল। এর থেকে যে পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক ঝরে যাবে তা আমরা অনায়াসে লেপ ব্যবহার কিংবা লেপ বিলি করে কমাতে পারি।
আমরা সারাজীবন লেপ ব্যবহার করে আসলাম। কিন্তু হুট করে কম্বলের প্রতি আগ্রহী হওয়ার কারণ হিসেবে এর সহজলভ্যতা এবং নামমাত্র মূল্যকে দায়ী করা গেলেও পরোক্ষভাবে আমাদের তথা নিজেদের দায়িত্বহীনতাকে আড়াল করা যায় না। কখনও কি ভেবে দেখেছেন ফ্লিসের একটা কম্বল কয়বার ব্যবহার করা যেতে পারে? আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি কম্বল না দিয়ে যদি একটা পরিবার/ব্যক্তিকে একটা লেপ দেওয়া যায় সেটার ব্যবহার যোগ্যতা একটা ফ্লিসের কম্বলের থেকে কয়েক শত গুণ বেশি হবার কথা। এই হিসাবের ফলাফল আমাদের স্বচেতনতার ওপর নির্ভর করে। আমি আপনি আমরা- সবাই চাই অন্যকে যতটা পারি সাহায্য করতে। কম্বল বিতরণ কেবল একটা উদাহরণ- যেখানে আমরা চাইলেই দায়িত্ববান হতে পারি।
পরিবেশের জন্য ভাবার সময় আমাদের অনেক আগেই হয়েছিল বা হয়েছে। এখন শুধু উপলব্ধি করার সময়। পরিবেশের প্রতিটি বিষয়ের পরিবর্তন অনুভব করার সময়। নিজেকে প্রশ্ন করার সময় – আমরা কি কিছুই করতে পারি না? ব্যক্তি হিসেবে কি আমার কোনও দেনা নেই?
তথ্যসূত্র
1. Boucher, J. and Friot, D. (2017). Primary Microplastics in the Oceans: A Global Evaluation of Sources.
2. Textile Exchange (2019). Preferred Fiber and Material Market Report.
3. Napper, I. and Thompson, R. (2016). Release of synthetic microplastic plastic fibres from domestic washing machines: Effects of fabric type and washing conditions. Marine Pollution Bulletin.
4. Ellen MacArthur Foundation (2017). A new textiles economy: Redesigning fashion’s future.
5. Koelmans, A., Bakir, A., Burton, G. and Janssen, C. (2016). Microplastic
as a Vector for Chemicals in the Aquatic Environment: Critical Review and
Model-Supported Reinterpretation of Empirical Studies. Environmental
Science & Technology.
6. Henry, B., Laitala, K. and Grimstad Klepp, I. (2018). Microplastic pollution]
7. https://en.wikipedia.org/wiki/Fast_fashion]
8. https://earth.org/fast-fashions-detrimental-effect-on-the-environment/]
9. [ 20 cvZv https://quantis.com/wpcontent/uploads/2018/03/measuringfashion_globalimpactstudy_full-report_quantis_cwf_2018a.pdf Fleeec]
10. [https://brenmicroplastics.weebly.com/project-findings.html]